নিশাতের ফোন কলে ঘুম ভাঙ্গলো,কোনোরকম চোখ কচলে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বিশাল ধমকের সুরে নিশাত চেচিয়ে বলো উঠলো-
"কি হলো,নবাবজাদার এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি?"
ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সকাল ১০:৪২ টা। এই যা আজকে আর রক্ষা নেই। ১০ টা বাজে নিশাতের সাথে ক্যাম্পাসে দেখা করার কথা। আর আমি কিনা এখনো ঘুমাচ্ছি।
- নিশাত,তুমি ১০ টা মিনিট অপেক্ষা করো। আমি ১০ মিনিটের ভিতরেই ক্যাম্পাসে হাজির হচ্ছি।
- গুল্লি মারি তোমার ১০ মিনিটের। তোমার আসতে হবেনা। আমি চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।
-- এই প্লিজ প্লিজ,যেও নাহ। তুমি গেলে আমার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। ১০ টা মিনিট ই তো।
-- আচ্ছা আসো নবাবজাদা। আজকে তোমার হাল খারাপ না করে তাহলে আমি আর যাচ্ছি নাহ৷
-- থ্যাংক ইউ মহারাণী।
একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে আমাদের মধ্যে দুজনের একজন রেগে গেলেই আমি নিশাতকে মহারাণী নামে ডাকি,আর নিশাত আমাকে বানিয়ে দেয় নবাবজাদা।
নিশাত আমার ক্লাসমেট। আমরা দু'জন ই একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি। ভার্সিটিতে আসার পরে অনেক বন্ধুর ভীড়ে আমার বন্ধু তালিকায় নিশাতের আগমন ঘটেছিল হঠাৎ করেই৷ পুরো ভার্সিটি জুড়ে নিশাত ই আমার একমাত্র মেয়ে বন্ধু। অনেকেই আমাদের বন্ধুত্বটাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখে৷ তাদের ধারণা আমরা প্রেম আবদ্ধ আছি। তবে সেদিকে আমার আর নিশাতের কর্ণপাত নেই। আমরা আমাদের মতই চলছি ফিরছি। গত সাড়ে ৩ বছরে ওকে যতটা জ্বালিয়েছি,অন্যকেউ হলে এতদিন সহ্য করে থাকতো বলে আমার মনে হয়না৷
নিশাতের একটা বিশেষ গুণ হচ্ছে সে কখনোই আমার উপর বিরক্তবোধ করেনি। এমনও দিন গেছে তাকে তীব্র রৌদ্রে ২ ঘন্টা ও দাড় করিয়ে রেখেছি অপেক্ষা করতে বলে। আমি কখনো তার ভিতরে এর জন্য রাগ দেখিনি। এমন একটা বন্ধু পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার।
_
কোনোমতে ফ্রেশ হয়েই ক্যাম্পাসের দিকে দিলাম দৌড়। ১০ মিনিটের কথা বলে আজকেও অনেকক্ষণ দাড় করিয়ে রেখেছি।
-সরি,সরি,সরি৷ বুঝতেই পারছি মহারাণী আজকে ভিষণ ক্ষ্যাপা আমার উপর। আপনি যে শাস্তি দিবেন,সে শাস্তি আমি মাথা পেতে নিবো জনাবা।
- ইয়ার্কি করা হচ্ছে আমার সাথে তাইনা? দাড়াও দেখাচ্ছি তোমার ইয়ার্কির ফল।
এই বলেই আমার পিঠের উপর ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়ে গেল।
বন্ধুত্বের ভীড়েও যে এমন ভালোবাসার শাসন চলে সেটা কেউ আঁচ করতে পারেনা। বেশিরভাগ লোক ই এটাকে প্রেমের সম্পর্কে গুলিয়ে ফেলে।
ছোটগল্পঃ মহারাণীর শাসন
লেখকঃ ইসহাক মাহমুদ
No comments:
Post a Comment